ষ্টাফ রিপোর্টার- আন্দোলন থেকে ‘পিছু হটে’ এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ‘বাধ্য’ করতে ও জনমত তৈরীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দল পুনর্গঠন নিয়ে ব্যস্ত। একইসঙ্গে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচন হলে যাতে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারি।’ অবশ্য তিনি মনে করেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন সরকারের ওপর নির্ভর করছে। ২৫ জুলাই রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। যেকোনো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও কোনো আপত্তি নেই।’
এদিকে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস কারাগারে আটক থাকার পর ১৪ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে ছাড়া পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন তিনি। এর আগে তাকে দেখতে তার বাসায় যান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ সময় মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের যার যার এলাকায় জনসংযোগ ও সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘যে করেই হোক খুব দ্রুত দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীনরা যতই চেষ্টাই করুক না কেন তাদের এ নির্বাচন দিতেই হবে।’ বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্যের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সরব। তারা মনে করছেন, দেশে শিগগিরই একটি আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। এর পর থেকে দলের অনেক নেতা নড়েচড়ে বসছেন। অনেকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকাও সফর করছেন। অনেকে সফরের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, নতুন করে নয়, আমরা সব সময় নিজের জেলা ও নিজের নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। গত তিন মাসের আন্দোলনেও আমরা মাঠে ছিলাম। আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার আগে অনেককেই এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়াব। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির মুখপাত্র ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন না, দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি করছি। আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা আসুক। নির্বাচন যখন আসবে তখন দেখা যাবে আমরা প্রস্তুত কিনা।’ সূত্রটি জানায়, বিএনপি আর কোনো নির্বাচনী ট্রেন ‘ফেল’ করতে চায় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি বড় রাজনৈতিক ‘ভুল’ করেছে। সেই ভুল শুধরাতেই এবার বড় ধরনের ছাড় দিয়েও নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী দলের হাইকমান্ড। সে অনুযায়ী চলছে হোমওয়ার্ক। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, দেশে একটি ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের চাপতো সরকার অবশ্যই ফেস করছে। তারা (সরকার) মুখে যাই বলুক। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো বিকল্প আসলে সরকারের হাতে আর নেই।’
তিনি বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে বিএনপি কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকতে পারে। দলের অনেকেই বলছেন, তারা প্রস্তুত। যেকোনো সময় নির্বাচন হলে তারা তা ফেস করতে পারবেন। আর ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) হয়ত নিজস্ব চিন্তা ও পরিকল্পনায় এ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। সেটাই আমাদের রক্ষাকবচ বলে আমি মনে করি।’