অগ্রসর রিপোর্ট :
বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং টেকসই দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিভিন্ন উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো গভীরতর করতে সম্মত হয়েছে।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে আজ ঢাকায় এক যৌথ বিবৃতিতে উভয় দেশ বিমসটেক এবং সার্কে আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ফলপ্রসূ করতে কাজ করার ব্যাপারেও একমত হয়েছে।
উভয়পক্ষ টেকসই উন্নয়নে এজেন্ডা-২০৩০ এবং এসডিজি’র কার্যকর বাস্তবায়নে স্ব-স্ব জ্ঞান, ধারণা এবং আবিষ্কার বিনিময়ও সম্মত হয়েছে।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে তার সফর শুরু করেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয়পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিবাসন, স্বাস্থ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও আলাপ-আলোচনা বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে।
শুক্রবার শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে উভয় দেশের সম্পৃক্ততা বাড়াতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তারা এতদাঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা, সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে দুই নেতা এ ধরনের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৃহত্তর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সুবিধা লাভের লক্ষ্যে নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে দু’দেশের মধ্যে শুল্ক সহযোগিতা, দ্বৈত কর পরিহার এবং বিনিয়োগ সুরক্ষার বিষয়ে চুক্তিসমূহ চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে।
উভয় পক্ষ নিজ নিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপার্ক ও হাই-টেক পার্ক পারস্পরিক লাভজনক বিনিয়োগে অংশগ্রহণের ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে।
জনসংখ্যা বিষয়ক প্রফাইল ও দু’দেশের অর্থনৈতিক প্যাটার্ন উপলব্ধি করে উভয় পক্ষ দক্ষতা ও মানব সম্পদের উন্নয়নে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনমূলক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
তারা উভয় দেশের আইসিটি ও সংশ্লিষ্ট শিল্প এবং সম্পৃক্ত বেসরকারি সেক্টরের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব সুবিধার জন্য আইসিটি ও ডিজিটাল টেকনোলজির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ব্লু অর্থনীতির ক্ষেত্রে উভয় নেতা শান্তি, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির অঞ্চলে পরিণত করতে বঙ্গোপসাগরের উন্নয়নের সুযোগ উন্মোচিত করার লক্ষ্যে উপায় উদ্ভাবন এবং নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন।
তারা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও সিলন কর্পোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান এবং অবিলম্বে কোস্টাল শিপিং চুক্তি সংক্রান্ত চলমান আলোচনা সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা দারিদ্র্য দূরীকরণ, গ্রামীন উন্নয়ন ও জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং কৃষিতে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনের প্রশংসা করেছেন।
উভয়পক্ষ দু’দেশের স্বার্থে কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি, ব্যবসা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বেসরকারি সেক্টরকে সম্পৃক্ত করে সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে সহযোগিতার আগ্রহ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে।
দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব ও আঞ্চলিক সহযোগিতার চিন্তা-চেতনায় বাংলাদেশ তার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন সক্ষমতা সংক্রান্ত জ্ঞান, বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রস্তাব করেছে।
দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করে উভয় নেতা দু’দেশের জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময় গভীর করার ব্যাপারে সম্মত হন এবং আরো যোগাযোগ ও উচ্চ পর্যায়ে বিনিময় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
উচ্চ শিক্ষায় যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উভয় নেতা বাংলদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শ্রীলংকার মঞ্জুরি কমিশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে উভয় নেতা স্বাগত জানান।
উভয় নেতা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উচ্চ শিক্ষা, অর্থনীতি এবং সর্বোপরি উভয় দেশের জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগসহ ১৪টি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ২০১৮ সালে উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে শ্রীলংকা সফরের আমন্ত্রণ জানান।