অনলাইন ডেস্ক- এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ১৩০ উপজেলার ১৯০ ইউনিয়নে কেবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। বাকি ইউনিয়নগুলোয় পর্যায়ক্রমে স্থাপনের কাজে হাত দেবে বিটিসিএল। ৭০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জানিয়েছে, অর্থের অভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ দফায় দফায় পিছিয়েছে। তবে সরকার এবার এই প্রকল্পে অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। গত সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্যই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নকেই অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনার ঘোষণাও দেয়া হয়।
বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১৩০টি উপজেলার এসব ইউনিয়নে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করা হবে। সারাদেশে শক্তিশালী ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ই-তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালে। পরে তা ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালে অর্থের অভাবে কাজ শুরু করা যায়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকার এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ছাড় করেনি। প্রকল্পটি ২০১১-১২ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ১৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। এই ১৭ কোটি টাকা থেকে বিটিসিএল ৫ কোটি টাকার অপটিক্যাল কেবল কিনেছে। বাকি টাকা অবকাঠামো খাতে ব্যয় হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এক হাজার ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে হলে আরও ৭৭ কোটি টাকার কেবল কিনতে হবে। এই হিসেবে প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
জানা গেছে, টাকা না থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের সবচেয়ে বড় টাকা লাগবে ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি কেনায়। যন্ত্রপাতি কেনায় সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। তবে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এসব যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি বিটিসিএল। সরকারের আশ্বাসে দু’-এক মাসের মধ্যে ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই এক হাজার ইউনিয়নকে কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ২০১০ সালের ২২ মার্চ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের জন্য বিটিসিএলকে নির্দেশ দেয় সরকার। বিটিসিএল ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ খুব সহজে ও কম দামে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিতে পারবে। এক হাজারটি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পুরো টাকাই রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পে কোন দাতা সংস্থা টাকা দেবে না। বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেডের (বাক্যাশি) অপটিক্যাল ফাইবার কেবল উৎপাদন করে। নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজে সংস্থাটির উৎপাদিত কেবল ব্যবহার করা হবে এই প্রকল্পে।
সারাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হয়েছে, আইপিভিত্তিক সেবা দেয়ার জন্য। ৪২ জেলার দেড় শতাধিক নোটে মোট ৪৬ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন এডিএসএল এক্সেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বিটিসিএলের ৭৪৭টি এক্সচেঞ্জের (৬৪ জেলার) অপটিক্যাল ফাইবার সংযুক্ত করা হয়েছে। দেশে টেলিফোনের সংযোগ ক্ষমতা ১৪ লাখের বেশি হলেও এই সুবিধার আওতায় আসেনি বেশিরভাগ টেলিফোন। ইন্টারনেট সেবা দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হলেও সেই সেবা থেকে গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছে। কম দামে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গ্রামের মানুষও বিটিসিএলের ইন্টারনেট সেবা পাবে। বিটিসিএলের লাইনে ইন্টারনেটের গতিও বেশি থাকবে। টেলিফোন, এডিএসএল, ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথের চার্জ কমিয়ে আনা হযেছে। ব্যয়বহুল কপার কেবলে বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে খরচ কমানোর পদক্ষেপ হাতে নয়ো হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার ফাইবার লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগের কারণেই এসব করা সম্ভব হয়েছে। তবে এক হাজার ইউনিয়নে সংযোগ প্রকল্পটি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে অর্থের অভাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে গ্রাহক সেবা অনেক বেড়ে যাবে।
দেশের ‘উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল)। এ জন্য সারাদেশে নতুন করে ৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় টার্মিনাল নির্মাণের সরঞ্জাম স্থাপন করার জন্য একটি প্রস্তাবও করা হযেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট ব্যবহারে শহরের সঙ্গে গ্রামের পার্থক্য অনেক খানি দূর হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। দ্রুতগতির ই-সেবা ছড়িয়ে পড়বে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে। পাশাপাশি নতুন এই অপটিক্যাল কেবল সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যমান কেবলের ওপর চাপ কমবে। তথ্যপ্রযুক্তির চরম বিকাশের পরেও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছে। দেশে বিদ্যমান ৪৮৬টি উপজেলার মধ্যে ৪টি মেট্রোপলিটন শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা) প্রশাসনিক উপজেলা নেই। এই প্রকল্পে ৪৮২টি উপজেলাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৯টি উপজেলার বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩০৩টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় এ মুহূর্তে ভৌগোলিক কারণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি, অবশিষ্ট ২৯০টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। বঞ্চিত এলাকার মধ্যে রয়েছে ভোলা সদর, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বরিশালের মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ এবং হিজলা এলাকা।