স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে অফিসারদের অভিষেক অনুষ্ঠানে দেশের আকাশসীমার নিরাপত্তায় সর্বদা সতর্ক নজরদারি বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনারা এখন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সুরক্ষার জন্য পবিত্র দায়িত্ব পালনকারীদের অংশীদার। আমি আশা করি আপনারা মহান মুক্তিযুদ্ধের ও সত্যিকারের দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং পবিত্র সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলাদেশের আকাশসীমা মুক্ত রাখার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন কমিশনপ্রাপ্ত বিএএফ অফিসাররা এখন দেশের সুরক্ষায় এক মহান অংশীদার। তিনি বাংলাদেশের আকাশসীমা মুক্ত রাখার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকার জন্য তাদের নির্দেশ দেন।
আজ সকালে বিএএফ প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) ৭২ ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের (এফসিসি) এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি ২০১৫/বি অফিসার ক্যাডেট কোর্সের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ প্রদান করেন।
এরআগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে সুসজ্জিত প্যারেড পরিদর্শন এবং চমৎকার মার্চ পাস্ট অনুষ্ঠানে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি ফ্লাইট ক্যাডেটদের মধ্যে ট্রফি, সনদপত্র এবং ফ্লাইং বেজ প্রদান করেন।
ফ্লাইট ক্যাডেট একাডেমি আন্ডার অফিসার মো. আবু হাসান মেহেদি কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন। পরে, বিমান বাহিনীর কয়েকটি বিমান চমৎকার ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছার পর বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার ও বিএএফ একাডেমির কমান্ডেন্ট এয়ার কমোডর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম তাঁকে স্বাগত জানান।
মন্ত্রবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেনা বাহিনী প্রধান ও নৌ-বাহিনী প্রধান, কূটনীতিকবর্গ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ফ্লাইট ক্যাডেটদের অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসাররা বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে তারা যে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তা যথাযথভাবে অনুশীলন করবেন এবং পেশাগত উন্নয়নে অব্যাহত রাখবেন।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে যে কোন চ্যালেঞ্জকে একটি সুযোগে পরিণত করতে হবে এবং আপনাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা হবেন বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতা। তাদেরকে বিমান বাহিনীর সক্ষম উত্তরসুরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং ‘এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সততা, আন্তরিকতার কোন বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, সমসাময়িক প্রযুক্তিভিত্তিক এই যুগে ‘বিমান শক্তি’ সব ধরনের যুদ্ধে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং তাই, আমি আশা করি আপনারা প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এবং নতুন প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মহিলা ক্যাডেটদের অংশগ্রহণের বিষয় তার আনন্দ প্রকাশ করে এবং বিশেষভাবে অনুষ্ঠানে ফ্লাইং ব্যাজ অর্জনকারী দু’জন মহিলা পাইলটকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দেশের নারীরা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশ সকল খাতে বিস্ময়কর উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছে এবং বিমান বাহিনীর প্রতিটি সদস্য এই উন্নয়নের অংশীদার।
তিনি বলেন, তাই আপনাদেরকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে দেশকে স্থান দিয়ে বিমান বাহিনীর স্বার্থে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর সকল বিমান, যুদ্ধোপকরণ, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও অবকাঠামোসমূহ জাতীয় সম্পদ। এর সর্বোত্তম ব্যবহার ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিএএফ সদস্যরা সকল জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবেন।
বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে পূববর্তী সরকারের সময় আমরা বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার সংযোজন করেছিলাম।
তিনি বলেন, এছাড়া ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ অনুযায়ী গত ৭ বছরে আমরা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেছি এফ-৭ বিজি১ যুদ্ধবিমান, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এফএম-৯০। বিমান ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজারকে পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ককপিট সম্বলিত ওয়াইএকে -১৩০ কমব্যাট ট্রেইনার বিমান ও উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ এডাব্লিউ ১৩৯ হেলিকপ্টার। এছাড়া, সমুদ্রসীমার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের আকাশসীমা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কক্সবাজারে স্থাপিত হয়েছে ওয়াইএলসি-৬ এয়ার ডিফেন্স র্যাডার।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা, উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বন্ধুপ্রতীম যে কোন দেশের এ জাতীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও আমাদের বিমান বাহিনী অবদান রাখছে। নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এর উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, মহান স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু একটি দক্ষ ও চৌকস বিমান বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা এখন বিমান বাহিনীকে একটি শক্তিশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন বাহিনীতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি।
আজকের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ৭২ ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের ৪৩ জন ফ্লাইট ক্যাডেট, এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি ২০১৫/বি অফিসার ক্যাডেট কোর্সের ৩২ জন অফিসার ক্যাডেট সহ মোট ৭৫ জন ফ্লাইট ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন মহিলা।
ফ্লাইট ক্যাডেট আন্ডার অফিসার মো. আবু হাসান মেহেদিকে ৭২ ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের সর্বক্ষেত্রে সেরা হওয়ার জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ এবং জেনারেল সার্ভিস ট্রেনিংয়ে সেরা হওয়ার জন্য ‘কমাডেন্ট ট্রফি’ প্রদান করা হয়।
ফ্লাইট ক্যাডেট মুহাম্মদ শাদমান আলী ফ্লাইং একাডেমীতে সেরা হওয়ার জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং ফ্লাইট ক্যাডেট মশিউর রহমান গ্রাউন্ড ব্যাচে সেরা হওয়ার জন্য ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ লাভ করেন।
নাম্বার টু স্কোয়াড্রন সার্বিক বিবেচনায় সেরা হিসেবে একাডেমী কালার সহ ‘চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াড্রন’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
ফ্লাইং অফিসার সাদিয়া বিনতে সিদ্দিক এবং মিথিলা রোয়াজা ৬৮ অফিসার্স কোর্স থেকে ফ্লাইং ট্রেনিং কোর্স সফলভাবে সমপন্ন করার জন্য ফ্লাইং ব্যাজ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।