অগ্রসর রিপোর্টঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে দেশসেবার জন্য আরো সময় ও সুযোগ প্রদানের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করার সক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশবাসীর খাদ্য, মাথা গোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। পাশাপাশি ধনী-গরিবের বৈষম্যও কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে এবং জনগণও এটা আগামীতে মনে রাখবে। তিনি আওয়ামী লীগকে বার বার দেশ সেবার সুযোগ প্রদান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগকে একে অপরের পরিপূরক আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এ দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এই মর্যাদাকে ধরে রেখে দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী এবং উন্নত করে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল বরিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহারা খাতুন, যুগ্ম-সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগই পারে এই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
তিনি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ বহুমুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই উদীয়মান সূর্যের মত বিশ্ব দরবারে এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশ বিরোধী যুদ্ধাপরাধী, দালাল চক্রের নানামুখী ষড়যন্ত্রের প্রসংগ উল্লেখ করে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ দলের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন।
এ ধরনের জঘন্যতম হামলার ঘটনা একটির পর একটি ঘটানো হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জাতির জনক বন্ধবন্ধুর আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলে জনগণ ও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘কি পেলাম আর কি পেলাম না, সেটা বড়ো কথা নয়Ñ জনগণের জন্য কতটুকু কি করতে পারলাম সেটাই বিবেচ্য বিষয়।’
কি পেলাম, আর পেলাম না- বঙ্গবন্ধু এসব নিয়ে কখনও ভাবতেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর সারাটা জীবনই দুখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে, তাদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, তাঁদের ন্যূনতম মৌলিক সুবিধাটুকু নিশ্চিত করার জন্যই সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন, বিশ্বের দরবারে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় এনে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি দলের জন্য মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেন। যা পরবর্তীতে স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো গড়ে তোলেন।
অথচ জাতির পিতাকে হত্যার পর তাঁর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) নাম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তুু ষড়যন্ত্রকারীরা সেটা করতে পারেনি। কারণ, সত্যের জয় হবেই। সত্য চির ভাস্বর। সত্য কখনো মুছে ফেলা যায় না। বিশ্বব্যাপী এটা প্রমাণিত।
বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, যিনি দেশ স্বাধীনের তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনী ভারতীয় সৈনিকদের দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্য, তিনি আর ১০টি বছর বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারতো।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির পিতার প্রশাসনিক সক্ষমতা নিয়ে নিজস্ব লেখনিতে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি এবং ১১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভে সক্ষম হন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশবাসীকে একটি সংবিধান উপহার দেন এবং প্রয়োজনীয় সকল আইন প্রণয়ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘হয় তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর ছিলেন, না হয় আদৌও তারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে মেনে নিতে পারেননি। অথবা স্বাধীনতা বিরোধীদের টাকা খেয়ে জাতির জনকের বিরুদ্ধে বদনাম দিয়ে তাঁকে হত্যা করার একটা গ্রাউন্ড তৈরি করেছিল বলে আমার ধারণা।’
প্রধানমন্ত্রী সেদিনের সেই সমালোচকদেরকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘তাদের অনেকেই আজ হয়তো বেঁচে নেই, আবার কেউ কেউ বেঁচেও আছেন। যারা বেঁচে আছেন হয়তো তারা এখন চিন্তা করবেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছরে দেশের জন্য কি কি করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ শাসনাধীন ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত সময়কে স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করে বলেন, তখনই কেবল দেশের জনগণ প্রথমবারের মতো জানতে পারে যে, সরকার হচ্ছে জনগণের সেবক।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ২০০৯ থেকে বর্তমানকালে, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দেশের অর্থনীতি,সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভবনটি ১০-তলা করা হবে। এতে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়, কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরী, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, সাংবাদিক লাউঞ্জ এবং একটি ডরমেটরি থাকবে। আর পুরো ভবনটিতে ওয়াই ফাই সুবিধা থাকবে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভবন নির্মাণ কাজের মূল তদারকিতে রয়েছেন।