স্টাফ রিপোর্টার: অনলাইন মার্কেট প্লেস বিক্রয় ডটকমে ভাল বেতনের চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে একটি চক্র। চক্রটিতে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার একাধিক ও রুমানিয়ান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এক নাগরিক জড়িত রয়েছে।
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী রাজধানীর মালিবাগে নিজ কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুরে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
মানবপাচার চক্রের সদস্যদের মধ্যে মো. আল আজাদকে (২৭) বনানীর ডিওএইচএস, ফিরোজ আহমেদকে (২৮) উত্তরা এবং কৃষ্ণ গোপাল দে-কে (৩৮) পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
অপহরণ ও প্রতারণার শিকারদের কাছ থেকে এবং গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটির নানা কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে সিআইডি।
মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘কৃষ্ণ গোপালের পায়ে এ্যাংলেটের ভিতরে লুকানো ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি দুজনের কাছ থেকে একাধিক মোবাইল ফোন ও বিদেশে রিফিউজি স্ট্যাটাস নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত আবেদন ফরম উদ্ধার করা হয়েছে।’
‘চক্রটি অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভিকটিমদের ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যায়। তাদেরকে সেখানে জিম্মি করে মানবপাচার চক্রটির সদস্যরা পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে,’ বলেন তিনি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘‘কাওসার ও মিজান এ চক্রের প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের দুজনকে ‘জন’ নামে রুমানিয়ান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক অস্ট্রেলিয়া অথবা নিউজিল্যান্ডে তার নিজস্ব চেইন ফ্যাক্টরিতে কাজ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। জনের সঙ্গে অনলাইনে তাদের পরিচয় হয়। প্রথমে তিনি ভিকটিমদের প্রত্যেককে আড়াই লাখ টাকা করে দিতে বলেন এবং বাকি টাকা অস্ট্রেলিয়া অথবা নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে দিলেই হবে বলে জানান। টাকা দেওয়ার জন্য এ চক্রের তিন বাংলাদেশী সদস্য আজাদ, ফিরোজ ও কৃষ্ণ গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন জন।’’
মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘কাওসার ও মিজান প্রত্যেকে আড়াই লাখ টাকা আজাদ, ফিরোজ ও কৃষ্ণ গোপালের কাছে দেন। পরে চক্রটি ভিকটিমদের জাল ভিসায় ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে পাসপোর্ট আটকে রেখে নির্যাতন করে চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদের বাধ্য করে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। ভিকটিমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চক্রের দাবি অনুযায়ী আরও ১৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন।’
তিনি বলেন, ‘পরে জাল ভিসায় ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশের অভিযোগে ওই দেশের সরকার ভিকটিমদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশে ফেরার পর কাওসার ডেমরা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর আওতায় ২৬ নভেম্বর মামলা করেন। মামলার পর আমরা তদন্ত শুরু করি।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিকটিম কাওসার জানিয়েছেন- চক্রটি মোট ১৭ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে তার কাছ থেকে নিয়েছে। দেশে ফেরার পরও চক্রের সদস্যরা ভিকটিমের পরিবারের কাছে আরও টাকা দাবি করে হুমকি দিচ্ছিল।’
অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘টাকা লেনদেনের জন্য সুবিধামত বিভিন্ন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এবং হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছে। ভারতে এ চক্রের দুই সদস্যকে চিহ্নিত করা গেছে। ভিকটিমদের যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন ইন্দোনেশিয়ায় এক ট্রেড ফেয়ার চলছিল। তাই জাল ভিসায় সে দেশে প্রবেশ করতে তাদের সমস্যা হয়নি।’
মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় মানবপাচার চক্রের সদস্যরা মুক্তিপণ পাওয়ার পর জাল ভিসা লাগানোয় অন্য কোনো দেশে পাঠাতে পারবে না বলে জানায়। এরপর তারা ভিকটিমদের ওই দেশে বাংলাদেশী এ্যামবাসিতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তারা এ্যামবাসির সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন।’
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।