অগ্রসর রিপোর্ট : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে দুর্দশাগ্রস্ত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-র প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ফোরামের যেকোন উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের ফাঁকে গতকাল দিনের শেষ দিকে এখানে ইউএনজিএ সদর দফতরে রোহিঙ্গা বিষয়ে ওআইসি’র কন্ট্রাক্ট গ্রুপকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংকট সমাধানে আপনাদের ঐক্য প্রদর্শন করুন।’
শেখ হাসিনা মিয়ানমারে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ঢল সামলাতে বাংলাদেশের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে ‘জরুরি মানবিক সহায়তা’ চেয়েছেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযানে মুসলিম ভাই ও বোনেরা জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখী হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সর্বকালের সবচেয়ে বৃহত্তম দেশত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী ওআইসি নেতাদের অবহিত করেন যে, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে স্থল ও নদী পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, এদের ৬০ শতাংশই শিশু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি অসহনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের অবস্থা পরিদর্শন করেছি এবং আমি তাদের বিশেষ করে নারী ও শিশুর ভয়ঙ্কর দুঃখ-দুর্দশার ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন জানাচ্ছি এবং এখানে এসে মিয়ানমারের বর্বরতার ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে শুনুন।’
তিনি বলেন, মিয়ানমার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে প্রচারণা চালাচ্ছে, অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে এবং দেশটিকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে হবে।
তবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো পর্যন্ত ভ্রাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশগুলো থেকে বাংলাদেশকে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
অন্যান্যের মধ্যে ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথাইমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের নির্মমতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে অবশ্যই তাদের স্বদেশে ফেরত নিতে হবে।
তিনি নিরপরাধ নাগরিক বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা দিতে মিয়ানমারের ভেতরে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির প্রস্তাব দেন এবং ‘অনতিবিলম্বে নিঃশর্তভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে’ কফি আনান কমিমনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে প্রবেশের আগে থেকেই গত তিনদশকে বাংলাদেশ তাদের আরো ৪ লাখ উদ্বাস্তু আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্থান ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সব মিলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। বাংলাদেশ দুর্দশাপীড়িত এই লোকদের খাদ্য, আশ্রয় এবং জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী- রোহিঙ্গারা ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী’ মিয়ানমারের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সমস্ত ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে রোহিঙ্গারা কয়েক শতাব্দী ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার পরিকল্পনা মাফিক সংগঠিত ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের তাদের পৈতৃক নিবাস থেকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করছে এবং নিকট অতীতে তারা দেশের স্বীকৃত সংখ্যালঘু গ্রুপের তালিকা থেকে প্রথম রোহিঙ্গাদের বাদ দেয়।
তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় এবং পরে তাদের নিজ দেশে ইন্টারনালি ডিসপ্লেস পার্সন’স (আইডিপি) ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকল রোহিঙ্গাকে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘তবে মিয়ানমার সরকার এ আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না, বরং রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো বন্ধ করতে সীমান্তে স্থলমাইন পেতে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ‘জাতিগত নিধনের’ অবসান দেখতে চায়। ‘মুসলিম ভাই- বোনদের দুর্দশার অবসান হওয়া দরকার। এই সংকটের মূলে মিয়ানমার এবং মিয়ানমারেই এর সমাধান পাওয়া যাবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।