ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। খবর দ্য হিন্দু ও স্টেটসম্যান।
শুভ্রা মুখার্জির পরিচয় বহুবিধ। তিনি ভারতের ফার্স্টলেডি, বাংলাদেশের মেয়ে, রবীন্দ্রসংগীতের বিখ্যাত শিল্পী, মেধাবী চিত্রকর এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শ্রীমতী মুখার্জির মৃত্যুতে আমরা এক মহান বন্ধু ও শুভার্থীকে হারালাম।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। এজন্য তিনি আজ সকালে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্যে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লি যাবেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে গত শনিবার ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে টেলিফোন করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুভ্রা মুখার্জির খোঁজ নিয়েছিলেন বলে দিল্লির স্টেটসম্যান পত্রিকা জানিয়েছে।
শুভ্রা মুখার্জি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে ৭ আগস্ট তাকে নয়াদিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি গতকাল মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্বামী প্রণব মুখার্জি ও তিন সন্তান অভিজিত মুখার্জি, ইন্দ্রজিত মুখার্জি ও শর্মিষ্ঠা মুখার্জিকে রেখে গেছেন।
১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইল জেলার এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে শুভ্রা মুখার্জির জন্ম। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কবিগুরুর একান্ত অনুরাগী শুভ্রা মুখার্জি গানে ও নৃত্যনাট্যে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে গড়ে তুলেছিলেন গীতাঞ্জলি ট্রুপ। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বহু দেশের মঞ্চে তিনি রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের পরিবেশনায় অংশ নেন। শুভ্রা মুখার্জি ভালো ছবি আঁকতেন। নিজের আঁকা ছবি নিয়ে তিনি বেশকিছু প্রদর্শনী করেছেন। এছাড়া তিনি দুটি বইও লিখেছেন। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছেন ‘চোখের আলোয়’। নিজের দেখা চীনকে তিনি তুলে ধরেন ‘চেনা-অচেনা চীন’ গ্রন্থে।
বাংলাদেশের মেয়ে শুভ্রা মুখার্জি আমৃত্যু এদেশের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি পৈতৃক বাড়ি নড়াইলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালেও তিনি পৈতৃক ভিটে দেখতে নড়াইল সফর করেন।
আজ সকাল ১০টায় দিল্লির লোদি রোড শ্মশানে শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। এর পর দিল্লির ১৩, তালকাটোরা রোডে ছেলে অভিজিত মুখার্জির বাড়িতে তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে বলে ভারতের রাষ্ট্রপতির টুইটার অ্যাকাউন্টে জানানো হয়েছে।