স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এ সকল ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর পক্ষে আনোয়ারুল আবেদীন খানের এক প্রশ্নের এ কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম-ইসি, বিবিআইএন প্রভৃতি জোট বা ফোরামকে গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ভেড়ামারা-বহরমপুর পয়েন্টের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। একই লাইনের মাধ্যমে আগামী ২০১৮ নাগাদ আরো ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরের মার্চ নাগাদ ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১শ’ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ কুমিল্লা অঞ্চলের কিছু অংশে সরবরাহ করার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আইডিবি (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক)-এর আবাসিক মিশন স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। শিগগিরই এ অফিস স্থাপিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সার্ক ও বিমসটেকের মত প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক সংস্থার সক্রিয় সদস্য হিসেবে এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত বিসিআইএম-ইসি ও বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপালকে নিয়ে গঠিত বিবিআইএন-এর মত উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অংশীদার হিসেবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সম্পর্ক বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর খুব দ্রুততার সাথে আমরা ভারতের সাথে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন করি। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর আমি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ চুক্তিতে স্বাক্ষরি করি। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ এবং দ্বি-পাক্ষিক ও বহু-পাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বন্টন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভিন্ন নদীর অববাহিকা ভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস এ্যাক্ট’ শীর্ষক একটি আইন প্রণয়ন করেন। সরকারের বিগত মেয়াদে ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দ্য ল’ অব সী (ইউএনসিএলওএস)-এর বিধান অনুযায়ী সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (আইটিএলওএস)-এর রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণী সংক্রান্ত মামলার শান্তিপূর্ণ অবসান ঘটে। এই দু’টি রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার এবং ভারতের সমুদ্রসীমানা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।