এম নজরুল ইসলাম, বগুড়া প্রতিনিধি- ডিজিটাল সময়ে ঘরে অলস বসে থাকার দিন শেষ। সংসারের কাজের ফাঁকে নারীরাও স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুজছেন। সন্তানদের ভবিষ্যত ও খেলাপড়ার খরচ চালিয়ে নিয়ে সংসারের অভাব মেটাতে নারীরা নিজেরাই তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার অবহেলিত গ্রামগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সু-পথে এগিয়ে যাওয়ার আশায় বাঁশের পণ্য তৈরীর কাজ করছেন।স্বাবলম্বী হওয়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে শতশত নারী সংসার কাজের ফাঁকে বাঁশের পন্য তৈরীর কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই।তবুও এদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি।
এ উপজেলায় বাঁশের তৈরী পণ্যের কদর দিনদিন কমে যাওয়ায় কারিগরদের বাড়িতে বাড়িতে এ পন্যের মজুদ বাড়ছে। সঠিক সময়ে বিক্রয় করতে না পারায় তৈরীকৃত পন্যগুলো নষ্ট হচ্ছে বলে কারিগররা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অবহেলায় পড়ে থাকা এ শিল্পটির সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাড়ছে প্লাষ্টিকজাত পণ্যের কদর। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এ পন্য জেলা-সদরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রফতানি করা হলে ডিজিটাল সময়ে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলো সুদিনের পথে এগিয়ে যাবে।
শনিবার সকালে উপজেলার নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বড় ডেরাহার হিন্দুপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সংসার কাজের ফাঁকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাঁশের পন্য তৈরীর কাজ করছেন। নারী-পুরুষ কারিগররা বাঁশ দিয়ে তৈরী করছেন খলপা (তালাই), খলি, ডালি, টোপা, খাঁচি, কুঁজি, চাটাই, কুলা, ভাঁড়, চাকলসহ বিভিন্ন পণ্য।কারিগরদের বাড়িতে তৈরীকৃত বাঁশের পন্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
বেচাবিক্রির অভাবে নষ্ট হচ্ছে এসব পন্য।কারিগররা জানান, ১২০টাকা মুল্যের একটি বাঁশ দিয়ে ২টি খলপা (তালাই), ৫টি খলি, ৪টি ধানের ডালি, ৩টি গরু পালন কাজের ডালি, ৫টি টোপা, ৩টি কুজি তৈরী হয়। ৫০টাকা থেকে ৬০টাকা মূল্যের একটি বাঁশ দিয়ে ১টি খলপা (তালাই), ২টি খলি, ২টি ধানের ডালি, ২টি গরু পালন কাজের ডালি, ২টি টোপা, ২টি কুজি তৈরী হয়। বাঁশের ভিতর অংশ দিয়ে খলপা, টোপা ও বাহিরের অংশ দিয়ে ডালি, কুজি, খাচি তৈরী করে থাকে।
তৈরীকৃত খলপা প্রতি পিছ বিক্রি হয় ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, থলি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, ধানের ডালি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, গরু পালন কাজের ডালি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, টোপা ২৫টাকা থেকে ৩০ টাকা, কুজি ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা ও খাচি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই গ্রামের কারিগর জতিন্দ্রনাথ, অতিচন্দ্র, সচিন চন্দ্র, নিশি চন্দ্র, জগিন্দ্রনাথ, নবচন্দ্র, সতিশ চন্দ্র ও বিরেন চন্দ্র বলেন, আমরা সবাই কৃষি জমিতে দিনমজুরের কাজ করি। কাজের ফাঁকে বাঁশের পন্য তৈরী করে সংসারের বাড়তি আয় হয়।
তবে পুরুষের চেয়ে একাজে নারীদের গতি বেশী। সংসারের কাজের ফাঁকে পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশী পন্য তৈরী করে থাকে। কথা হয় নারী কারিগর কমলা রানী, শ্যামলী রানী, চন্দনা রানী, অঞ্জলী রানী ও আড়তি রানীর সাথে। তারা জানান, সংসারের দুর্দিন কাটিয়ে সুখের কিনারায় পা রাখার স্বপ্ন দেখেছি।সেই স্বপ্ন বাঁধাগ্রস্থ্য হতে চলেছে।পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকায় কাজ থেমে থেমে চলছে। হাট-বাজারে চাহিদা নেই, পর্যাপ্ত পাইকারও নেই, সরকারি কোনো পৃষ্টপোষকতা নেই। ফলে আমাদের সুখের স্বপ্ন দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে। নারী কারিগররা এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনারা মাদের নিয়ে বেশী করে লিখেন।আমরা আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চাই।বাঁশের তৈরী পন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্নস্থানে রফতানি হওয়া দরকার। এ কাজে আমাদের পর্যাপ্ত পূজি নেই।আমরা সরকারের সহযোগীতা চাই। এদিকে, গ্রামের জলাশয় ও চাষবাদি জমির মাঠে মাঠে চলছে মাছ ধরার মৌশুম। বাঁশের তৈরী ঘুনি, আটল, কুজি, ভাঁড়, চেড়োসহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত তৈজষপত্র ব্যবহার আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তবে বাঁশের চাষ কমে যাওযায় এশিল্পের কারিগরদের কাঁচামালের জন্য বেগ পেতে হচ্ছে।
তারপরেও পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে বাঁশের পণ্য তৈরীতে ব্যস্ত কারিগররা। খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হাটলাল, বড় ডেরাহারের হিন্দুপাড়া, ইসুবপুর, বুড়ইল, বামনগ্রাম, পেংহাজারকি, পৌর শহরের কালিকাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শতশত পরিবারের সংসার চলে এশিল্পের মাধ্যমে। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি ও উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম বলেন, বড় ডেরাহার গ্রামের হিন্দুপাড়ায় বাঁশের পন্য তৈরীর কাজ করে সংসারে পিছিয়ে পড়া অনেক নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে এশিল্পকে এগিয়ে নিলে ওইগ্রামের বাঁশ শিল্পটি এউপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহজাহান আলী জানান, ওইসব নারী-পুরুষ যদি ক্ষুদ্র ঋনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। সেক্ষেত্রে বাঁশের পন্য তৈরীর কাজে গ্রুপ ভিত্তিক ক্ষুদ্র ঋন দিয়ে এশিল্পে উৎসাহ করা হবে।