মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এর আগে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি সাইন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইএসএ) এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেদেশের (ডিইএবি) প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। এ দুটি সংগঠনই তাদের বেতন বৈষম্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
বিএইএসএ : বিএইএসএ’র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। সংগঠনের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব ড. এএসএম সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যথেষ্ঠ সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। মেধাবীরা নিজেদের উদ্যোগে বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে আর ফিরছেন না। আর দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে। এতে দেশ মেধা শূণ্য হয়ে পড়ছে। মেধাবী বিজ্ঞানীদের ধরে রাখতে হলে তাদের বেতন-ভাতা বাড়তে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১২ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। অন্যদিকে পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের একই পর্যায়ে যেতে ২৫ বছর লাগছে। এ বৈষম্য দূর হওয়া উচিত। কারণ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে বিজ্ঞানী পদে যোগদানের জন্য আবেদন করতে এসএসসি থেকে এমএসসি পর্যন্ত ন্যুনতম ৩টি প্রথম বিভাগ থাকতে হয়। ১৯৭৩ সালে কমিশন প্রতিষ্ঠার পর দেশের মেধাবীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রচলিত পে-স্কেলের অতিরিক্ত বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। ফলে দেশের সেরা মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান না করে কমিশনে বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করতেন।
তিনি বলেন, ‘ড. ওয়াজেদ মিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চাকরি বিধিমালা প্রণীত হওয়ার পর থেকে কমিশনের বিজ্ঞানীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুরূপ বেতন-ভাতাদি পেয়ে আসছেন। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল সুবিধার কারণে কমিশনের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের ২৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের ন্যায় গ্রেড-১ এ বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। এতে তাঁরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হন তেমনি তাঁদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল সুবিধা বাতিল করা হলে বিজ্ঞানীরা নিরুৎসাহিত হবেন।’
তিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করার এবং তাদের ধরে রাখার জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা চালুর দাবি জানান। এ বিবেচনায় কমিশনের বিজ্ঞানীদের জন্য ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বিশেষ ভাতা চালুর দাবি করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের ৯ম গ্রেড থেকে ৭ম গ্রেডে, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের ৬ষ্ঠ গ্রেড থেকে ৫ম গ্রেড, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ৪র্থ গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেডে, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ৩য় গ্রেড থেকে ১ম গ্রেড এবং জ্যেষ্ঠ্য প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ১ম গ্রেড থেকে সিনিয়র সচিবের গ্রেড দাবি করেন।
আইডিইবি: ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর কাছে আইডিইবি প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হল, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের ধাপ ২০টির পরিবর্তে ১৫ থেকে ১৬টিতে নির্ধারণ করা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য চার বছর চাকরি পূর্তির পর সিলেকশন গ্রেড এবং ৮, ১২, ১৫ বছর চাকরি পূর্তির পর ১ম, ২য় ও ৩য় টাইম স্কেল প্রদান করা। পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঁচ বছর চাকরি পূর্তিতে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদে, আট বছর চাকরি পূর্তিতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে, ১৫ বছর চাকরি পূর্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে, ২০ বছর চাকরি পূর্তিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে এবং ২৫ বছর চাকরি পূর্তিতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদের বেতন স্কেল প্রদান বা পদোন্নতির বিধান রাখা।
দাবিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বেতন বৈষম্য দূর করতে সকল পদোন্নতির ক্ষেত্রে একই পদ্ধতিতে বেতন স্কেল পরিবর্তন করতে হবে। প্রাথমিক নিযুক্তিতে ২টি অতিরিক্ত বর্ধিত বেতন অথবা মূল বেতনের ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল ভাতা প্রদান। সরকার নিয়ন্ত্রিত সব বিদ্যুৎ কোম্পানিসহ বিভিন্ন সংস্থায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সমন্বিত একই বেতন স্কেল এবং পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান, পলিটেকনিক শিক্ষকসহ টিভিইটি শিক্ষকদের জন্য উৎসাহজনক পৃথক বেতন স্কেল, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এসএসসি (ভোক) শিক্ষকসহ সকল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদেরকে অষ্টম জাতীয় স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান।
দুই সংগঠনের কাছ থেকে আলাদা আলাদা বক্তব্য শোনার পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অষ্টম পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগে যেসব ক্যাডার সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পেয়েছেন, তাদের এ সুবিধা বহাল রাখা হবে। এটা বাতিল করা হবে না। প্রজ্ঞাপন জারির আগে বাকি ক্যাডাররা সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল নিয়ে নিতে পারেন। তবে প্রজ্ঞাপন জারির পর সব কিছু নতুন নিয়মে চলবে।’
তিনি বলেন, ‘চাকরি যে গ্রেডে শুরু হয় সেটা ঠিক থাকবে। এটা পরিবর্তন করা যাবে না। বিশেষ প্রণোাদনাও দেওয়া হবে না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের কাজের এবং যোগ্যতার বিচারে নতুন কি করা যায় সে বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। যিনি যেখানে আছেন তিনি সেখানেই থাকবেন। কারো মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল থাকছে না। এটা একেবারে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটার আর প্রয়োজন পড়বে না। এজন্য কোনো প্রকার প্রভাব পড়বে না বলে আমি মনে করি। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল উঠিয়ে দিয়ে বিকল্প যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাতে সবাই খুশী হবেন। এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।