অগ্রসর রিপোর্ট: পদ্মা সেতু, এটি কেবল সেতুই নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্র আর আত্মমর্যাদার প্রতীক। বহুল প্রতিক্ষিত সেতুটি আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সারাদেশে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একটি মহল নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতে পারে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি রেঞ্জের অফিসারদের পদ্ম সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সর্তক করা হয়েছে। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে একটি গোষ্ঠী এই স্বপ্নের সেতুর অনুষ্ঠানকে বানচাল করতে পারে। এই কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ করে ঢাকার প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার থানা এলাকায় মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়াতে। পাশাপাশি অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়টি ঢাকার বেশ কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ পেয়েছি। গত রবিবার রাত থেকেই অভিযান চলছে। বিশেষ করে নজর রাখা হচ্ছে মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে। ঢাকার বাইরে থেকে কোনো বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান নিয়েছে কি না। অবস্থান নিলেও তার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা। আর কারোর সন্দেহ হলে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি মেসে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে এবং হবে। অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেসে অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে বহিরাগতরা অবস্থান নিয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
হঠাৎ এমন উদ্যোগ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পদ্ম সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে কেউ একটা গুজব ছড়িয়ে অনুষ্ঠান বানচাল করার চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া বড় ধরনের কিছু একটা করে ফেললে। এজন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশের প্রতিটি থানায় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে থাকার জন্য।
কতদিন এই অভিযান চলবে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, কতদিন চলবে এখনও এমন কোনো নির্দেশ আসেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানকে ঘিরে যেহেতু নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু অনুষ্ঠানের পরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বড় সাফল্য। সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই সরকারবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে, ষড়যন্ত্র করছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরেও নাশকতার অপচেষ্টা চলছে বলে গোয়েন্দা তথ্য আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ হায়দার আলী খান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের বাইরে থেকেও উসকানি দেওয়া হচ্ছে। দেশের ভেতরেও কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে। তাদের মনিটরিং করছি। সেই অনুযায়ী ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ডিআইজি মোহাম্মদ হায়দার আলী খান বলেন, দেশের যেসব জায়গায় বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে, সেসব জায়গায় নজদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা অনুষ্ঠান স্থলে আসবেন তাদের চলাফেরাও নির্বিঘ্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোনো হুমকি আছে কিনা জানতে চাইলে ডিআইজি হায়দার আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো নাশকতার হুমকি নেই। তবে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করলেও সেটা সফল হবে না। সন্দেহভাজনদের ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিআইজি হায়দার আলী বলেন, পাশাপাশি সাইবার মনিটারিং বাড়ানো হয়েছে। আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার পদ্মাসেতু নিয়ে গুজব ছড়াতে দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে না পারে, সেজন্য সার্বক্ষণিক মনিটারিং করা হচ্ছে।