অগ্রসর রিপোর্ট :রাজধানীতে পানি সরবরাহকারী সংস্থা ওয়াসা নগরীর প্রতিটি এলাকায় পানির একই দাম নিচ্ছে। বর্তমানে উচ্চ ও নিম্নবিত্তের মানুষের পানির দামে কোনো পার্থক্য নেই। এজন্য নগরীর বস্তি এবং নিম্নআয়ের মানুষের বাস যেসব এলাকায় সেখানে বর্তমান মূল্য ঠিক রেখে অভিজাত এলাকায় পানির বাড়তি দাম নির্ধারণের কথা ভাবছে সংস্থাটি।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান শনিবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন এই ভাবনার কথা। বেলা ১১টায় কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে ‘নিম্ন আয় এলাকার আদর্শ গ্রাহকের সম্মাননা স্মারক বিতরণী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন ওয়াসা এমডি। ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তাকসিম এ খান বলেন, ‘পানির যা উৎপাদন খরচ তার চেয়ে অনেক কমে দিচ্ছি। বাকিটা সরকার আমাদের দিচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই সুবিধাটা বড় লোকরাও পাচ্ছেন। আমরা সবাইকে এক রেটে কেন পানি দেব! সব শ্রেণির মানুষের জন্য পানির দাম এক হওয়া উচিত না। আমরা চিন্তাভাবনা করছি, এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করব। পানির দাম কমানো হয়ত সম্ভব না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় দাম বাড়বে।’
নগরীর বস্তিগুলোতে বৈধ পানির সুবিধা দিচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নগরীর সব বস্তিকে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসা যাবে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমরা পানিকে জাতিসংঘ ঘোষিত মানুষের মৌলিক অধিকার বিবেচনা করে বস্তি এলাকায় বৈধ পানি দিচ্ছি। তাদের হোল্ডিং নাম্বার নেই, তারপরেও আমরা তাদেরকে পানি দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা শহরের বস্তিগুলোকে বৈধ পানির আওতায় নিয়ে আসতে পারব।’
নিম্ন আয়ের এলাকার আদর্শ গ্রাহকের সম্মাননা স্মারক বিতরণী অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তির ২৫ জনকে সম্মাননা প্রদান করে ওয়াসা। এই ২৫ জন তাদের নিজ নিজ বস্তির সবাইকে নিয়ে ওয়াসার বৈধ পানির সংযোগ ব্যবহার করেন এবং সময়মতো বিল পরিশোধ করেন। তাদের উদ্দেশে ওয়াসা এমডি বলেন, ‘ভারতের মুম্বাইর বস্তিতে পানি ব্যবস্থাপনা মাস্তানদের আওতায়। করাইল বস্তির পানিও মাস্তানদের হাতে ছিল। আমরা সেটাকে বৈধতার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছি। সেখানকার গ্রাহকরা আজ এখানে সম্মাননা নিতে এসেছেন। এই শহরের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছে, যাদের টাকার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তাদের কাছে আমাদের ৭০ লাখ টাকা বকেয়া আছে। অথচ বস্তির মানুষের কাছে আমাদের ১০০ টাকাও বকেয়া নেই।‘
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকায় দুই কোটির বেশি মানুষ। লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ। তাদেরও পানি দরকার। ওয়াসা ৯০ শতাংশ মানুষকে পানি সরবরাহ করছে। পদ্মার পানিকে, মেঘনার পানিকে পরিশোধন করে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটার বিল আপনি দিচ্ছেন না।’
দেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ সর্বত্র বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের সব বড় বড় শহরে সার্ফেজ ওয়াটারের ব্যবস্থা করছি। নদীর পানিকে পরিশোধন করে খাবার ও ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। মাটির নিচ থেকে আমরা পানি তুলব না। ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশের মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।‘
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান এবং দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহসহ ঢাকা ওয়াসা, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং ডিএসকের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।