অগ্রসর রিপোর্ট :এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথম দিনে সোমবার (২ নভেম্বর) আওতাধীন এলাকার ১৩ হাজার ৮২৫টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৯৪টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৮ হাজার ৭১৩টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে জমে থাকা পানি পাওয়ায় সেখানে মশার কীটনাশক প্রয়োগের পর ওই পানি ফেলে দেয়া হয়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৬টি মামলায় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে (৫৪টি) একযোগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়।
উত্তরা অঞ্চলে (অঞ্চল-১) ১ হাজার ৩৭৭টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ১৪টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ১৭৯টিতে জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়নের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চারটি মামলায় মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-২ অঞ্চলে (অঞ্চল-২) ২ হাজার ৬৩৬টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে দুটিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৩৬৬টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) ১ হাজার ৬০৩টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৩৯টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ১৫৪টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ছয়টি মামলায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে (অঞ্চল-৪) ১ হাজার ৪৮৫টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮২৯টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) ২ হাজার ৪৭৯টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ১৭টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ৯৭৩টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পার্শিয়া সুলতানা প্রিয়াংকার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি মামলায় ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
হরিরামপুর অঞ্চলে (অঞ্চল-৬) ১ হাজার ৪২৮টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ৯টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ১৬২টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি মামলায় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
দক্ষিণখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৭) ৯৩৮টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে দুটিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৭৫৪টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উত্তরখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৮) ৭৪১টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে একটিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৪৭০টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চলে (অঞ্চল-৯) ৪৯৬টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ছয়টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৩৩৬টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। প্রধান ভাণ্ডার বিক্রয় কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সগীর হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি মামলায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
সাতারকুল অঞ্চলে (অঞ্চল-১০) ৬৫২টি বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে একটিতে এডিসের লার্ভা এবং ৪৯০টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
আগেরবারের মতোই এই চিরুনি অভিযান পরিচালনায়ও প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের একটি সেক্টরে অর্থাৎ ১০টি করে সাব-সেক্টরে অভিযান চলছে। এভাবে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ দিনে সমগ্র ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান সম্পন্ন হবে। প্রতিটি সাব-সেক্টরে ডিএনসিসির চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন মশকনিধনকর্মী, অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কি না, কোথাও তিন দিনের বেশি পানি বা ময়লা-আবর্জনা জমে আছে কি না, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, সেগুলো পরীক্ষা করছে।