অগ্রসর রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে বিধিবদ্ধ করার জন্য গঠিত কমিশন পুনর্গঠনে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে কমিশন করে দিয়েছিলাম। এটা গেজেট করেই করা। আমি মনে করি- এর সময়টা আমরা বৃদ্ধি করে দিয়ে, যদি আরো কিছু সদস্য নিতে হয় তাদেরকে নিয়ে, এই কাজটা খুব দ্রুত করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমি খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব, আমাদের ধর্মমন্ত্রীও এখানে আছেন, আমি বলবো এই উদ্যোগটা নিতে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আয়োজিত উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
দেশের উলামা-মাশায়েখদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোলাকিয়া ঈদ জামাতের গ্রান্ড ইমাম ও জমিয়তুল উলামার সভাপতি আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রধান, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, খ্রীস্টান ধর্মীয় প্রধান আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথেরোসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিকবৃন্দ এবং আলেম-উলামা সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নে ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা একটা কমিশন গঠন করে দিয়েছিলাম। কমিশনের মাধ্যমে একটি কারিকুলাম ঠিক করা, যে কারিকুলামের ভিত্তিতে আমরা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদ দিতে পারি।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পাঁচটা বোর্ডে বিভক্ত এই কওমী মাদ্রাসাগুলোর কারিকুলাম তৈরির বিষয়ে আলেম-উলামাগণ একমত হতে পারেননি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা আশা করি, এখন যখন আমাদের ধর্মের ওপর এতবড় আঘাত এসেছে, এই সময় সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে যদি এই কারিকুলামটা ঠিক করে দেন। অথবা এর মধ্যে যারা মানতে চান, আমি বলবো তারাও যদি এক মত হন, যেহেতু আমি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়টা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। এখানে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা পাবে, সনদ পাবে, দেশে বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে। সেই সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারাই একমত হতে চান, তারাই একমত হন। আমরা এটা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সনদ দিতে হলে একটা মিনিমাম কারিকুলাম লাগবে। না হলে কিসের ভিত্তিতে শিক্ষা হবে, কিসের ভিত্তিতে সনদটা দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করে এই সময়ে এটা খুব দরকার বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের এক লাখ আলেম-উলামা স্বাক্ষরিত শান্তি-কল্যাণ ও মানবতার জন্য ‘ফতওয়া’র প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয় এবং আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ এই এক লাখ আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত ৩০ খন্ড ‘ফতওয়ার’ একটি খন্ড প্রতীকি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।