অগ্রসর রিপোর্ট : বাঙালী নারী জাগরণের অগ্রদূত কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মবার্ষিকী আজ ।
তিনি ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মা সাবেরা বেগমের কাছেই বাংলা পড়তে শেখেন এই মহিয়সী নারী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছে। এর মধ্যে রয়েছে কবি সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা, কবি সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও সভায় ‘মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং শিক্ষা ও সুফিয়া কামাল’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ঠ সমাজবিজ্ঞনী ড. অনুপম সেন। আজ সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম।
কবি সুফিয়া কামাল তাঁর সাহিত্য চর্চ্চার পাশাপাশি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনেও যোগ দেন।
৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তমখা এ ইমতিয়াজ’ উপাধি বর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সংগঠক। ১৯৭০ সালে বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচি কাচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশ বিভাগের আগে ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে কবি সুফিয়া কামালের কাব্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। তাঁর রচিত সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে কবিতা, গল্প ও ভ্রমণ কাহিনী। তাঁর রচিত ‘একাত্তুরের ডায়েরি’ একাত্তরে বাঙালী জীবনের অকথিত চিত্র তুলে ধরেছে।
সাহিত্য সৃষ্টি, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পদক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ প্রায় ৫০টির ও বেশি পুরস্কার লাভ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও সম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। কবি সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। তিনিই প্রথম বাঙালী নারী যাঁকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।