অগ্রসর রিপোর্ট :আরো দুটি অর্থ পাচার মামলায় ক্যাসিনো কারবারি বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে (চার্জ) অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেছেন আদালত। আগামী ২২ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে মামলা দুটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুরও দিন ধার্য করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন তুহিন মুন্সি, জয় গোপাল, আবুল কালাম আজাদ, নবী হোসেন, সাইফুল ইসলাম, এনামুল ও রুপনের ভাই মেরাজুল হক ভূঁইয়া, রশিদুল হক ভূঁইয়া, শহিদুল হক ভূঁইয়া এবং তাদের সহযোগী পাভেল রহমান। তবে এ মামলায় এনামুল ও রুপনের ভাই মেরাজুল হক ভূঁইয়া, রশিদুল হক ভূঁইয়া, শহিদুল হক ভূঁইয়া ও তাদের সহযোগী পাভেল রহমান পলাতক রয়েছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মতিয়ার রহমান বুধবার (২৭ জানুয়ারি) জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে এই আদালতে বিচারাধীন তিনটি অর্থ পাচার মামলার মধ্যে একটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ-৫ মো. ইকবাল হোসেনের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অন্য দুই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
মতিয়ার রহমান জানান, আদালতে ওয়ারী থানার অন্য অর্থ পাচার মামলাটিতে মঙ্গলবার ওই দুই সহোদরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরো তিনজন সাক্ষী। তারা হলেন র্যাব-৩-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আখতারুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক মুকুল মিয়া ও করপোরাল শামীম আহমেদ। এ নিয়ে এই মামলার চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটিতে এনামুল-রুপনসহ ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার মোট সাক্ষীর সংখ্যা ২০ জন।
গত বছরের ২২ জুলাই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত বছরের ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের একটি ভবন থেকে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক ভূঁইয়া এনু ও বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া। এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসা ও তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা ও সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় ছয়টি মামলা হয়।
গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়।
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে দুদক এখনো এ বিষয়ে আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
সিআইডির তদন্তে এনু-রুপনের নামে ব্যাংকে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২৮টি ফ্ল্যাট, ছয়টি গাড়ি ও কয়েক বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে। ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই দুই ভাই। তদন্ত করে সংস্থাটি দেখেছে, বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণ রাখার পাশাপাশি ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখেন ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাই।
সিআইডির তদন্ত অনুসারে, পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন তারা। আদালতের আদেশে এসব টাকা এখন জব্দ রয়েছে।