অগ্রসর রিপোর্ট :শুরু হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর (৫০ বছর পূর্তি) বছর ২০২১। এবছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিরা। নয় মাসের যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ। আর এ বছর ৫০ বছরে পা রাখতে চলেছে দেশটি। তাই ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে বাঙালি জাতি।
অন্যদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও (১৭ মার্চ) এবছর। সব মিলিয়ে এবারের বিজয়ের উদ্যাপনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে।
স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দিয়ে যারা অপমান-অপদস্থ করেছিল, সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অনেকের জন্য রোলমডেল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ।
এদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ২০২১ সালে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরেই করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলাসহ আর্থসামাজিক নানা সংকট সমাধানেরও চ্যালেঞ্জ আছে বাংলাদেশের সামনে। সবমিলিয়ে বলা হচ্ছে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জের মিশেলে ২০২১ সাল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বছর।
চলমান মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে নতুন বছর জুড়েই নানা উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও সুবর্ণজয়ন্তী পালনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক করে নয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এ ছাড়া কমিটিতে সহায়তাকারী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।
কমিটিতে সহায়তাকারী কর্মকর্তা হিসেবে আরও রাখা হয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
অন্যদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী ২৫ মার্চ থেকে দলটি এসব কর্মসূচি পালন করবে। এজন্য বিষয়ভিত্তিক ১৫টি এবং ১০টি বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারের মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্মানজনকভাবে আমরা আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে পারি সেজন্য সাধ্যমত আমরা চেষ্টা করবো। আশাকরি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে হয়েছে তার চেয়ে আরো ভালভাবে এটা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। বিশ্ববাসীর কাছে যাতে আমাদের এ খবর পৌঁছে যায় সে উদ্যোগও আমাদের থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপনের প্রস্তুতি থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে মুজিব বর্ষের অনেক অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনেও বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি মার্চ মাসের পর এই দেশের এবং বিশ্বের অবস্থার পরিবর্তন হবে। ভালভাবে আমাদের কর্মসূচী পালন করতে পারবো। তারপরও যদি বাস্তবতা ভিন্নরকম থাকে তাহলে সংক্ষিপ্তভাবে করতে হবে।’
নতুন বছর শুরুই হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ দিয়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এবং সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন একাধিক ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ায় সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে মোকাবেলা একটা বড় কাজ হবে সরকারের।
করোনাভাইরাস মহামারি হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বের অর্থনীতি এবং জীবন-জীবিকার জন্য। নতুন বছরে প্রবৃদ্ধি আর অর্থনীতির চাকা সচল রেখে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং আয় বৈষম্য নিরসন কতটা হবে, তার দিকে দৃষ্টি অর্থনীতিবিদদের।